অভিনয়ের এক যুগ পূর্ণ হলো তাঁর। ১৯৯৮ সালের অক্টোবরেই মুক্তি পেয়েছিল পূর্ণিমা অভিনীত প্রথম ছবি এ জীবন তোমার আমার। তারপর বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আজ তিনি প্রথম সারির তারকা। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, শেষ কবে প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছিলেন?
প্রশ্ন শুনে ইতিউতি তাকান পূর্ণিমা। স্মৃতি হাতড়েও মনে আসে না তাঁর। ‘ও হ্যাঁ, আকাশছোঁয়া ভালবাসা ছবিটি দেখতে গিয়েছিলাম।’
তা-ও প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় আগের কথা। একজন অভিনয়শিল্পী হয়েও প্রেক্ষাগৃহের প্রতি এই অনীহা কেন?
পূর্ণিমার সরল স্বীকারোক্তি, ‘সিনেমার জৌলুশটা কমে গেছে। এখন আগের মতো যেন প্রাণ নেই এখানে। যেসব তেলেগু ছবি থেকে এখন আমাদের এখানে বেশির ভাগ ছবি তৈরি করা হয়, সেসব ছবি তো আমরা টিভির পর্দায়ই দেখতে পাই। আর নিজের ছবি তো আমি ডাবিং করার সময়ই দেখে নিতে পারছি।’
সিনেমার জৌলুশ কমে গেল কেন?
পূর্ণিমার পাল্টা প্রশ্ন, ‘এখন কি এফডিসির শুটিং ফ্লোরগুলো আগের মতো আলোকিত থাকে? এখন কি এফডিসিতে সব সময় মানুষের আনাগোনা থাকে? এখন কি শুটিংরাজ্য কক্সবাজারে সিনেমার লোকদের মেলা থাকে সব সময়? এসবের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয় তখনই, যখন একজন এফডিসিতে থাকেন, একজনের জন্য এফডিসি আলোকিত থাকে। আবার যখন তিনি কক্সবাজারে থাকেন, তখন এফডিসির ফ্লোরগুলো অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আসে। এই একজন হচ্ছেন আমাদের শাকিব। বলছিলেন তিনি।
পূর্ণিমার বাড়ি সেদিন আত্মীয়স্বজনে ছিল সরগরম। কিছুক্ষণ পর পর তাঁকে খোঁজ নিতে হচ্ছে। বললেন, ‘চলচ্চিত্রে যেমন অভিনয় করি, তাতে অনেক সময় মনে হয়, এই বাসায়ও কি আমি অভিনয় করি? পরে আবার মনে হয়, না, শুধু বাসায় কেন, এই দুনিয়াতেই একধরনের অভিনয় করছি। অভিনয় করে বেঁচে আছি।’ কিছুটা যেন আনমনা তিনি।
দুই বছর ঈদে আপনার কোনো ছবি মুক্তি পায়নি? নিশ্চয়ই সে সময়টা অনেক খারাপ লেগেছে। এবার আপনার ছবি মুক্তি পাচ্ছে। প্রত্যাশা কী রকম?
‘যে ঈদগুলোতে আমার ছবি মুক্তি পায়নি, তখন একধরনের খারাপ লাগার অনুভূতি থাকাটা ছিল স্বাভাবিক। আবার এবার যখন পরান যায় জ্বলিয়া রে ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে, তখন তো ছবি নিয়ে একধরনের টেনশন কাজ করছেই। ছবিটি দেখেছি। বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়ার মতো এ ছবিতে আমি ছাড়াও আরও দুজন নায়িকা আছেন। একজন নদী, অন্যজন রোমানা। নায়ক তো শাকিব খান। তো এই তিনটি মেয়ের চরিত্র ছিল তিন রকমের। এর মধ্যে আমি চেষ্টা করেছি নিজের কাজটা অন্যদের থেকে একটু আলাদা করে করার জন্য। ঈদে আরও ছবি মুক্তি পাবে অপু বিশ্বাসের। ফলে একধরনের প্রতিযোগিতার ব্যাপার তো আছেই।’ বললেন পূর্ণিমা।
পূর্ণিমা-ভক্তদের জন্য আরও সুখবর হচ্ছে, পরান যায় জ্বলিয়া রে এরই মধ্যে দেশের বড় প্রেক্ষাগৃহগুলোতে প্রদর্শনের জন্য স্থান করে নিয়েছে। পূর্ণিমা শোনালেন আরও সুসংবাদ, ‘এরই মধ্যে এফ আই মানিক ও সোহানুর রহমান সোহানের নতুন দুটি ছবি হাতে নিয়েছি। দুটি ছবিতেই আমার বিপরীতে আছেন শাকিব।’
নির্মাতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজকদের মতে, শাবনূরের পর এখন নির্ভরযোগ্য নায়িকা বলতে পূর্ণিমা এরই মধ্যে তাঁর একটি শক্ত জায়গা করে নিয়েছেন। খোদ শাকিব খান বললেন, ‘একজন নায়িকার যত রকমের গুণাবলি থাকা প্রয়োজন, তা পূর্ণিমার মধ্যে বিদ্যমান। ওকে আমি প্রায়ই বলি, তুমি আরও সিরিয়াস হও, তোমার অবস্থানটা আরও উঁচুতে থাকা প্রয়োজন ছিল আরও আগেই।’
অবশ্য এ নিয়ে পূর্ণিমার খুব বেশি প্রত্যাশা নেই। ‘অভিনয়জীবনের এক যুগে আমি এরই মধ্যে যা পেয়েছি, তাতে আমি খুশি। টাকা-পয়সা বা দর্শকের ভালোবাসা যেমন মানুষকে এক ধরনের আনন্দ দেয়, তেমনি আমি পেয়েছি অন্য একটি আনন্দ। সেটি হলো, আমার অভিনয়জীবনে এমন কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছি, যে ছবিগুলোর নাম অনেক অনেক দিন মানুষ মনে রাখবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মনের মাঝে তুমি।’ বললেন পূর্ণিমা।
কর্মপরিকল্পনা কী আপনার?
পূর্ণিমা জানালেন, ‘যেভাবে কাজ করছি, সেভাবেই চালিয়ে যাব। তবে এক নম্বর আসন ধরে থাকতে হবে, এই নীতিতে আমি বিশ্বাসী নই। এটি নিয়ে আসলে ভাবতেই চাই না। কারণ এই ভাবনা মনের মধ্যে থাকলে ভালো কাজ করার কথা ভাবব কখন? যদি ভালো কাজ করি, তবে আসন এমনিতেই আমার কাছে ধরা দেবে। আর সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে খুব ভালো গল্পের পাণ্ডুলিপি পেলে নাটকেও অভিনয় করব। কারণ ছোট পর্দার দর্শক আমাকে প্রায়ই বলেন, নাটকে কাজ করি না কেন? আমার মনে হয়েছে, এই মাধ্যমেও বড় পর্দার পাশাপাশি কাজ করলে দোষের কিছু নেই।
No comments:
Post a Comment